দিনমজুর হাবিব গম, সার, চাল, সিমেন্ট, বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা টানেন। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পান তিনি। ৬২ বছর বয়সী হাবিব আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সকাল ৭টায় কাজে আসেন, রাতে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। ঘরে ছয় জন। বড় ছেলেও দিনমজুর। তার স্ত্রী ও এক ছেলে আছে। ছোট ছেলে কিছু করে না। খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয়। মাস শেষে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, জ্বালানি কাঠ কিনতেই টাকা ফুরিয়ে যায়। রোজার সময় বাড়ির সবাই ইফতার-সেহরিতে একটু ভালো খাবার খেতে চায়। পণ্যের যে দাম, তাতে কি ভালো কিছু কিনতে পারব?’
রেলস্টেশন চত্বরে ফেরি করে চা-সিগারেট, বিস্কুট বিক্রি করেন শেফালি বেগম। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে খুলনা রেলওয়ে বস্তিতে ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা গেছেন। এর পর অভাব দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে কাজের জন্য রাস্তায় নামি। ১০ বছর ধরে চা-সিগারেট, বিস্কুট বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফেরি করি। এতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। শাক-সবজি, ভর্তা, ডাল খেয়ে দিন কাটাতে হয়। দুই মাস আগে মেয়ে বলেছিল, মাংস খাবে। তার কথায় ১৮০ টাকায় ছোট একটি ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলাম। এর পর আর কিনতে পারিনি। রোজায় কী করব, বুঝতে পারছি না!’
প্রতিবারের মত এবারও অঙ্কুর সমাজের অসহায় হাজার হাজার মানুষের পাশে দাঁড়াবে এই রমজান মাশে। রমজান মাসজুড়ে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের দ্বারপ্রান্তে ইফতার নিয়ে পৌঁছে যাবে অঙ্কুরের ভলান্টিয়াররা। এ বছর অঙ্কুর ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নিয়েছে ৫ হাজার মানুষের কাছে ইফতার ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার। দুটো ভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে অঙ্কুর ফাউন্ডেশন এই কাজ করতে উদ্যোগী। নিয়মিত ইফতার এবং ইফতারের সামগ্রী বিতরণ এই উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত। সারা মাসজুড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে এই ইফতার দেওয়া হবে। ইফতারের জন্য যেকোনো শ্রেণী-পেশার মানুষ সাধ্যমত অনুদান দিয়েও একত্রিত হতে পারবেন অঙ্কুরের সঙ্গে।
অঙ্কুর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল, মসলাসহ রমজানজুড়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য নিয়ে তৈরি ৬০০ টাকার খাদ্যপণ্য পৌঁছে যাবে অন্তত ৫ হাজার পরিবারের কাছে। বিভিন্ন এলাকার সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র কিংবা কর্ম অক্ষম পরিবারই এই ত্রাণের আওতায় পড়বে। এই কাজে অঙ্কুর ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমনকি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এসেও অনেকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্ববান জানিয়েছেন।
১০ লাখ টাকার এই উদ্যোগে যাদের দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব তাদের কিছু দিনের খাবার চিন্তা দূর করাই অঙ্কুর ফাউন্ডেশনের এক মাত্র লক্ষ্য।
রমজান উপলক্ষে আরো একটি উদ্যোগ অঙ্কুর ফাউন্ডেশন নিয়ে থাকে যা হলো যাকাত প্রকল্প। অনেকেই তাদের যাকাতের টাকা অনুদান হিসেবে পাঠান অঙ্কুর ফাউন্ডেশনের হিসাব নাম্বারে। যেই অর্থ পুরো মাস সংগ্রহ করে পুরো বছরজুড়ে তা বিভিন্ন এলাকায় কর্ম অক্ষম মানুষদেরকে স্বাবলম্বী করার উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে অঙ্কুর ফাউন্ডেশন প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ও পরিবারকে কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করেছে। অঙ্কুর ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে ‘স্বাবলম্বী প্রকল্প’ অন্যতম।